আমার ব্লগ তালিকা

মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১০

আমি ও আমাদের দুঃখ


মেয়েদের নিয়ে কত স্বপ্নই না বাবা মায়েরবড় হয়ে একদিন মা বাবার স্বপ্নপূরণ করবে তারাস্বপ্ন পূরণে অনেকে গ্রাম, গঞ্জ থেকে শহরে পারি জমায় ক্যারিয়ার তথা চাকরির উদ্দেশ্যেএক্ষেত্রে, মধ্য পরিবার, গরীব পরিবারের সংখ্যা কম নয়তবে বেশিরভাগই শহরে পারি জমায় ধনীর দুলালীরাকেউবা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে ভর্তি হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেতবে, সীমিত সুযোগ থাকায়, অনেককে ভর্তি হতে হয়, প্রত্যন্ত গ্রামেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েমনের কষ্ট চেপে তাই তারা আবার চেষ্টা করে প্রথম বর্ষ শেষ করে, দ্বিতীয় বর্ষে শহর বা ঢাকায় স্থানাস্তরিত হতেকিন্তু সবার কি স্বপ্ন পূরণ হয়কত বাঁধা, কত বিপদ, কত দুঃখ আর কষ্ট করে বড় হতে হয় মেয়েদেরঅনেকে আবার ঝড়ে পড়ে শহরের নানা বৈচিত্রময়, অজানা আর অকল্পিনীয় গল্পের মতো করেতার জ্বলন্ত উদাহরণ ইডেনের মেয়েদের বর্তমান হালচালআবার অনেকে আছেন যারা ইডেনে থাকেন না থাকেন কোন মেস, হোস্টেল বা বাসা বাড়ির সাবলেটেতারই একটি নমুনাছন্দ নামে কিছুটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হলো

মেয়েটির নাম মণিবাড়ি দরলাম কোন এক জেলা···বাবা মায়ের বড় মেয়েছোট ভাই আছে, চোখে কম দেখেতাই ভাইটিকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখার সুযোগ নেই মায়েরআছে ছোট্ট আরেক মেয়ে তবে তার হাতে সমস্যাঅনেকটা জন্ম থেকেই অবশ ছোট্ট মেয়েটিতাই বাবা মায়ের যেন সব স্বপ্ন মণিকে নিয়েমণিকে তাই গ্রামের ছোয়া না লাগিয়ে জেলা শহরে নানির বাড়ি থেকে পড়াশোনা করালো বাবা মাভাল ফল করলো এসএসসিতেতার ধারাবাহিকতা রইলো এইচএসসিতেওএবার উচ্চ শিক্ষার পালামেয়ে ভর্তি হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়েতবে নেই যথার্থ গাইডলাইনকে দেখাবে হালনিজের চেষ্টাই দুবার চেষ্টা করলো মেয়েটি ঢাবি, জাহাঙ্গীর নগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েতবে ঠেকিয়ে রাখলো অগাধ প্রতিযোগিতাপিছনে পড়লো অনেকটামনের দুঃখ চেপেই রইল মেয়েটিরতবে চান্স পেলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েকিছুটা আশা নিয়ে প্রথম বর্ষ শেষ করলো সেদ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে অনেকটা আশা নিয়ে চেষ্টা করলো ঢাকায় আসারতবে ঢাকায় থাকার খরচ পাবে কোথায় বাবা মা তো বিয়ে দিয়ে বিদায় করলেই পারেঢাকা অনেক বড় ভাই আত্নীয় স্বজনের কাছ থেকে কিছু একটা করার চিন্তা করলোঅনেকে দেখালো পার্ট টাইম বা কোন ছোট খাট চাকরি করার কিছু সুযোগভাগ্যের কারণে চেহারা ভাল থাকায় শহরের চাকরি ভাগ্যে জুটলো মেয়েটিরঅনেক আশা নিয়ে পাড়ি দিলো ঢাকায়আসলো ইডেন কলেজে ভর্তি হতে

তবে মেয়েটি থাকবে কোথায়টাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসনকথায় বলে--- বাবা তুমি এক পেট খেয়ে যাও তাও ভাল তবে থাকবে দিতে পারবো নাঅনেকটাই সত্যি ঢাকা শহরেএক বড় ভাইকে বলে একটা হোস্টেল ম্যানেজ করা গেলস্থান ফার্মগেট, তেঁজকুণিপাড়াঅনেক ম্যাসই গড়ে উঠেছে এখানেতবে মেয়েদের মেসের সংখ্যা নেহায়েতই কমআর যেগুলো আছে গাদা গাদি করে থাকতে হয় মেয়েদেরঅনেকে আবার থাকে নিচে ও উপরে করেঢাকায় এক ফ্লাটে দুতলা করে থাকে এমন আবাসন আমার মনে হয় মেয়েদেরই কপালেতবে পড়বে না কেন  কেউ তো মেয়েদের থাকার জন্য বাসা দিতে চায় নাঅনেকে কোন মতে একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে তা আবার মেস বানিয়ে ডবল হারে ব্যবসা করছেএ ব্যবাসা থেকে আবার জীবিকা নির্বাহ করছে অনেকেতাই মেয়েদের উপর তো চাপ পড়বেইএসব মেসের বা হোস্টেলের সমস্যার কথা কি বলবোখেলেও না খেলেও টাকা প্রতি মাসে স্থায়ী তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার দিতেই হবেনেই ভাল বাথরুম, পানি সমস্যা, গ্যাস নেই, বিদুø তো থাকেই নাখাবারের মান একতরফাযা দিবে তাই খেতে হবেআর কিছু নিজে থেকে কিনতে গেলে অনেক দামএতো গেলো হোস্টেলের অবস্থাচাকুরি করতে যেয়ে, গাড়ি দিয়ে আসা এবং যাওয়ায় কত দুষ্ট লোকের খপ্পরে পড়তে হয় তারঅনেক সময় গাড়িতে না উঠতে পেরে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ আসে ৬০ টাকা দিয়েআবার শাহবাগ থেকে ফার্মগেট যায় ৮০ টাকা দিয়েতারপর চাকরি করতে যেয়ে কলিকদের সাথে আচার ব্যবহার চাল চলন, কথা বার্তায় কেমন যেন সবাই একটু খাটাতে চায়গ্রামের বলে সরলতার সুযোগ নেইএকটু ভুল হলেও ধমকঅনেকের আবার দূরের আত্নীয় ঢাকায় আছেন দীর্ঘদিন ধরেএলাকা থেকে নতুন কেউ ঢাকায় এসেছে শোনে আকে উঠে তারাতুই ঢাকায় আসলি আর জানালি নাতারাও নানা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেএদিক সেদিক বুদ্ধি দেয়কিছুটা ভাল কিছুটা মন্দএভাবেই চলে দিন কালতবু থমে যায়নি দিনবড় হতে হবে স্বপ্ন অনেক বুকে

মেসের সহপাঠীদের কেউ একেক জন একেক জেলারএকেক ধরনের মন মানসিকতাতারপরও অসহায় হয়ে চলতে হয় মেয়েদের সাথেএদের কেউ আবার প্রেম করে বয় ফ্রেন্ড আছেকেউ আবার ঢাকায় এসে লুকিয়ে বিয়ে করে বাবা মাকি না জানিয়েএমনই একজন জুট ছদ্দ নাম লিটন, নদীতার লুকিয়েই বিয়ে করেছেছেলে তিতুমীরে তৃতীয় বর্ষে, মেয়ে ইডেনে তৃতীয় বর্ষেভালই জমে উঠছে লুকিয়ে বিয়ে করার মজামাঝে মাঝে ঝগড়া হয়অনেকে বলে এদের সংসারটা হয়তো ভেঙ্গেই যাবেতবে ভাঙ্গা আর গড়ার মধ্যেই চলছে দিনকাল

এমনই এক জুটির কবলে পড়ে সদ্য ৩ মাস হলো নানা সমস্যায় পড়ে বড় হওয়া গ্রামের অসহায় মেয়ে মণিজুটিদের হাতে নেয় টাকা, তাই নানা রকম ফন্দি আটে টাকা কামানোরযেমন করেই হোক প্রেমের বিয়ে বিজয়ী হতে হবেতাই হাতে নেই নানা ধান্দাঅসহায় মণি বুঝতে পারেনি তাদের ফন্দিপ্রায় হোস্টেলে নদীর কাছে আসে লিটনতবে তার সাথে আসে মামা নামের কেউমামা শহরের বড় ব্যবসায়ীবসবাস লিটনের সাথে একটি সাবলেট বাসায়একসাথে থাকার কারণেই প্রায়ই মামা আসে লিটনের সাথেতবে একদিন হোস্টেলে এসে নদীর বান্ধবী গ্রামের মণির সাথে পরিচয় হয়মনের অজান্তেই মণিকে ভাল লেগে যায় মামারআটে নানা ফন্দিতারপর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর দেখা করতে আসে মামামামা বলে জানো আমি কেন আসি প্রতিদিনকেবল মণিকে দেখতেমণিকে একদিন সরাসরি অফার দেয় মামাআমি তোকে বিয়ে করতে চায়তোর সাথে প্রেম করতে চায়মণির সব সময় নাগ্রামের গরীর ঘরের মেয়ে বাবা মায়েই ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হবে না 

তবে মামার ফন্দি মণিকে আমার চাইই চাইনদী আর লিটনকে ম্যানেজ করে সেযত টাকাই লাগুক নাএকদিন নদী বলে মণি চল তোকে আজ এক জায়গায় নিয়ে যাবোকোথায় বলা যাবে নাদেখবিইতোমণি বলে না বল কোথায়নদী বলে লিটনের বাসায়তো লিটন নদীর লুকিয়ে বিয়ে করা জামাই যেহেতু সেখানে যাওয়াতো যেতেই পারেএদিকে, দুই তিন মাসে হোস্টেলে যাতায়াতে লিটনকে দুলোভাই আর মামার সাথে বেশ সখ্য গড়ে উঠে মণিরতাই নদীর প্রস্তাবটা ফেলতে পারেনা মণিতবে, মামা কথা মনে নেই মণিরলিটনের বাসা মহাখালিতে তিুতুমীর কলেজের পিছনের একটা সাবলেটেসন্ধ্যায় বেরিয়ে গেলো দুজনবিকেলের নাস্তা করে অনেক গল্পের এক পর্যায়ে মামা বলে বসলো চল আজ আমরা ব্যতিক্রম ধরনের একটা কিছু করিএজন্য ড্রিংস মানে বেয়ার খাওয়া যেতে পারেমণি জানে বেয়ার কিকিছুই কৌতুহল তো থাকতেই পারেতাই ৪ জনে রেস্টুরেন্ট থেকে বড় এক বোতল বেয়ার নিলোসব নিয়ে আসলো বাসায়২ মেয়েকে খাওয়ালো ৩ পিক করেআর তাতে তারা হয়ে গেল সেন্সলেসএগুলো খাবার পর থেকে কিছুই বলতে পারেনি নদী ও মণিতবে লিটন ও মামা খায় একটা করেতাদের কোন সমস্যা হয়নিতারপর মেয়ে দুটো সারারাত আর রাত পার হয়ে সকাল পর্যন্ত অচেতন ছিল

এদিকে, কোন ভাই, মণিকে খোঁজ নেয় হোস্টেলেমেসের কেউ বলতে পারে না মণি আর নদী কোথায়হোস্টেল কর্তৃপক্ষও জানে না মেয়েরা কোথায়অনেক খোঁজাখুজির পর সকালে নদী আসলো হোস্টেলে বলে রাতে ছিলাম আত্মীয়ের বাসায়এদিকে মণি যায় সকাল ৯টায় অফিস থাকলেও সাড়ে ১০টায়অফিসেও ধরা এতো দেরি হলো কেনহোস্টেলের চাপএরইমধ্যে বাসায় জানাজানি হয়ে যায় মণি হোস্টেলে রাতে ছিল নাকথা শুনে সেদিনই অভিভাবক আসে ঢাকায়সব শুনে বলে আমার মেয়ে মণির উচ্চ শিক্ষার দরকার নেইআমি আমার মেয়েকে হারাতে চাই নাআমার জেলাতেই থাকতে চাইদরকার নাই উচ্চ শিক্ষারতারপর ইডেনে আর ভর্তি হওয়া হয়ে উঠলো না মণিরবাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে চলে গেল গ্রামেসেখানেই পড়াশোনা শুরুহয়তো একটা বিয়ে দিয়ে বাকী কাজটা সারতে চায় বাবা মাকি আর করবে মণিজীবনে না বুঝে ভুল করেছেসেজন্য বাবা মায়ের কথাতো মানতেই হবে  তবে, মণি আর বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ ব্যর্থ করতে দায়ী কেএ সমাজনাকী স্বার্থপর চরিত্রহীনা লিটন আর মামা টাইপের কিছু ব্যক্তিএ প্রশ্নই আমাদের মতো সচেতন মহলেরএরকম অনেক স্বপ্ন ধুলিস্বা হয়ে যায় মণির মতোঢাকা শহরের আধুনিক ছোঁয়া আর অস চরিত্রের লোকের কাছে ধরা পড়ে নিজের স্বতিত্ব আর মান মর্যাদা হারিয়ে ফেলছে আজকের উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীরা

আশা করি আমি ও আমাদের এসব অপ্রকাশিত দুঃখ ও কষ্টগুলো দূর করতে মেয়েদের প্রয়োজনীয় হোস্টেল তৈরী, মেয়ের নিরাপত্তা বাড়ানো, মেয়েদের বাজেট বাড়ানো, আনাচে কানাচে গড়ে ওঠা হোস্টেলগুলোর জন্য আইন তৈরীসহ নানা সুবিধা বাড়াতে সরকার, প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবেদূর হবে আমি ও আমাদের দুঃখ এ আশা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে করতেই পারি 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন