টাঙ্গাইলের বাসাইলের মিরিকপুর গঙ্গাচরণ তপশিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সুজন কুমার সরকার (১৮) সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকায় খুন হয়েছে বলে গ্রেফাতারকৃত দুই আসামির জবানবন্দি থেকে জানা গেছে। তবে, এ খুনের মূলে রয়েছে প্রেমিকার ভাই। থানা পুলিশ অবশ্য প্রেমিকা এবং তার ভাইয়ের নাম প্রকাশ করতে নারাজ।
উল্লেখ্য, নিহত সুজন উপজেলার সৈদামপুর গ্রামের সুভাস চন্দ্র সরকারের ছেলে। গত ১৯ অক্টোবর থেকে খোঁজ না পাওয়া সুজনের গলিত লাশ গত ২২ অক্টোবর স্কুলের টয়লেটের কূপ থেকে উদ্ধার করে বাসাইল থানা পুলিশ। পরে উদ্ধারকৃত সুজনের মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রাশড়ার কালাম মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া (১৫) ও নাইকানী বাড়ির আলাল মিয়ার ছেলে আকাশসহ (১৫) ৬ জনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ৪ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযুক্ত জামাল ও আকাশ একই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। তারা দু'জনেই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
জবানবন্দির সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাসাইল থানার এসআই শ্যামল দত্ত জানান, মিরিকপুর গঙ্গাচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমঘটিত কারণে একই স্কুলের ছাত্র সুজন ও জামাল মিয়ার শত্রুতা থাকায় আসামিরা একমাস আগে থেকেই সুজনকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। পরে ১৯ অক্টোবর স্কুল ছুটির পর বিকেল ৩টার সময় আসামিরা সুজনকে কৌশলে স্কুলের দ্বিতল ভবনের ছাদের উপরে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাই সুজনের বন্ধু হওয়ায় সে তাদের সঙ্গে ছাদে ওঠে। তারা স্কুলের ছাদে বসে প্রায় ১ ঘণ্টা আড্ডা দেয়ার একপর্যায়ে জামাল তার কোমরে থাকা চাপাতি দিয়ে সুজনের ঘারে কোপ দেয়। সে কোপে কিছু না হওয়ায় আবার জামাল গলায় কোপ দিলে সুজন মাটিতে লুটিয়ে পরে এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
হত্যার পর সুজনের লাশ ছাদে রেখেই তারা চলে আসে। রাত ৮টার সময় আবার তারা স্কুলের পিছনে গাছ বেয়ে ছাদে ওঠে সুজনের লাশ নিচে ও হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাপাতি পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। পরে তারা লাশ স্কুলের টয়লেটের ট্যাংকিতে রেখে চলে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, বাসাইল থানা পুলিশ সুজনের প্রেমিকা একই স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী নাবালিকা হওয়ায় নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করেছে। থানার এসআই শ্যামল দত্ত জানান, সুজনের প্রেমিকা নাবালিকা এ জন্য তার নাম বলা যাবে না। কারণ নাম বললে মেয়েটির জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে, পুলিশের এ বক্তব্যে সুজনের পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, সুজনের প্রেমিকা ওই স্কুলছাত্রী ও তার ভাইকে পুলিশ আড়াল করার চেষ্টা করছে। প্রেমিকার ভাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল আসামি। তাকে গ্রেফতার করলেই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামির নাম বেরিয়ে আসবে। তারা তাকে অতিদ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন